কোনো শীর্ষক নেই

জোড়াতালি নিয়ে তৈরি সংগঠন কি পারবে তৃণমূলকে টক্কর দিতে?
December 11, 2017, 2:09 PM IST
প্রসেনজিত্ বেরা in জিরো আওয়ার |
রাজনীতি
২০১৪ সাল৷ রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ চলছে বিধানসভায়৷ ততক্ষণে বাম পরিষদীয় কক্ষে খবর চলে এসেছে ফ্রন্টের চার বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল, আরএসপির দশরথ টিরকে ও অনন্তদেব অধিকারী এবং সমাজবাদী পার্টির চাঁদ মহম্মদ ক্রস ভোটিং করেছেন৷ ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পঞ্চায়েত ও পুরসভা পর্যায়ে দলবদল শুরু হয়ে গেলেও বাম পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরবে তা সম্ভবত বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর ভাবনায় ছিল না৷ কাকপক্ষীকে টের না দিয়ে বাম পরিষদের দলে ভাঙনের এই নিখুঁত অপারেশন চালিয়ে ছিলেন মুকুল রায়৷ সে দিন এই ক্রস ভোটিং নিয়ে বিধানসভার করিডর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুকুল
বলেছিলেন, এই প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছিল৷ অনেক দিন ধরেই মত বিনিময় হচ্ছিল৷ কোনও সিদ্ধান্ত একদিনে হয় না৷ বাম পরিষদীয় দলে ভাঙনের অপারেশন অনেক দিন ধরে চালালেও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যে আঁচ করতে পারেনি মুকুলের কথাই সেই আত্মতৃপ্তিই উঠে এসেছিল সে দিন৷ শুধু বাম-কংগ্রেস পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরানো নয়, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর জেলায় জেলায় বিরোধী শিবিরে উপর্যুপরি ভাঙনের নেপথ্যে মুকুল রায় ছিলেন প্রধান কারিগর৷ শুধু বাম ও কংগ্রেস শিবির ভাঙা নয়, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সাফল্য এবং নির্বাচন পরবর্তী অধ্যায়ে জেলায় জেলায় তৃণমূলের সংগঠনকে ঢেলে সাজার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট ছিলেন মকুলই৷ তৃণমূলের তরফে নির্বাচন কমিশন সামলানো থেকে দল চালানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ বহু কাজেই তৃণমূলে নম্বর দুই ছিলেন কাঁচড়াপাড়ার বাসিন্দা৷
প্রশ্ন হল, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব ও জনপ্রিয়তার ছাতার তলায় থেকে মুকুল রায় যে ‘সাফল্য’ পেয়েছিলেন বিজেপিতে গিয়ে তিনি সেই ‘সাফল্য’র পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন? তৃণমূলের সংসদীয় ও পরিষদীয় টিমে ভাঙন ধরাতে পারবেন? ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গেরুয়া শিবিরে টেনে আনতে পারবেন? তৃণমূল তো দূরের কথা, এই রাজ্যে সিপিএমের যে সংগঠন এখনও অবশিষ্ট রয়েছে সেই গোত্রের সংগঠন তিনি বিজেপির জন্য তৈরি করতে পারবেন? হালে কাঁথি দক্ষিণ সহ কয়েকটি উপনির্বাচনে বিজেপির পালে যে হাওয়া উঠেছে সেই হাওয়াকে কি আরও জোরদার করতে পারবেন মুকুল রায়? ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ অনেক পরের বিষয় রাজ্যে বাম-কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপিকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ করতে পারবেন? আগামী দিনে মুকুল রায়ের সামনে এমনই একগুচ্ছ পরীক্ষা অপেক্ষা করছে৷ যার ফলাফল বলে দেবে মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্৷
রাহুল সিনহা, শমীক ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ, বাবুল সুপ্রিয়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়—আমজনতা এক ডাকে চেনে রাজ্য বিজেপিতে নেতার সংখ্যা এখনও এক ডজন ছাড়ায়নি৷ মুকুল যোগ দেওয়ায় রাজ্য বিজেপিতে তিনি এখন সব থেকে হেভিওয়েট নেতা৷ রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতার দিক থেকেও মুকুল রাজ্য বিজেপির অনেক নেতার থেকে এগিয়ে৷ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ‘বিশ্ববাংলা’, ‘জাগোবাংলা’ প্রভৃতির মালিকানা নিয়ে তথ্যপ্রমাণ পেশ করে কালীঘাটকে লাগাতার আক্রমণ করে সকলের নজরের কেন্দ্রে চলে এসেছেন মুকুল৷ তৃণমূলের অন্দরের খবর প্রকাশ্যে এনে রাজ্য রাজনীতিতে আপাতত হইচই বাধিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ দুঁদে আমলা অত্রি ভট্টাচার্য থেকে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ময়দানে নেমে অনেক অভিযোগ খন্ডন করলেও কিছুতেই ড্যামেজ কন্ট্রোল না হওয়ায় ‘বিশ্ববাংলা’ বিতর্কে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু তৃণমূলের ঘরের খবর বাইরে এনে কি নির্বাচনী ময়দানে ডিভিডেন্ট তুলতে পারবেন মুকুল? বঙ্গ রাজনীতির নিকট অতীতের ইতিহাস কিন্তু মুকুলের পক্ষে আশাব্যঞ্জক নয়৷ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম নেতা গৌতম দেব তৃণমূলের অন্দরের খবর বাইরে এনে বাজারগরম করেছিলেন৷ তখন গৌতম দেবের প্রতিটি সাংবাদিক বৈঠক ও জনসভা আমজনতার কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিল৷ মমতার সঙ্গে গৌতমের নিশানায় সে দিন ছিলেন এই মুকুল রায়৷ যদিও গৌতমের সেই বিখ্যাত ‘কুপন কেলেঙ্কারি’র অভিযোগ নির্বাচনী ময়দানে কোনও দাগ কাটতে পারেনি৷ এখন মুকুল রায় সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ্যে আনছেন গৌতম দেব অনেক দিন আগেই তা প্রকাশ্যে এনেছিলেন৷ নির্বাচনী ময়দানে তা থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কোনও ফায়দা তুলতে পারেনি৷ বিজেপির দপ্তর থেকেই নারদা কেলেঙ্কারির ফুটেজ প্রচার করা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারদা-নারদা কেলেঙ্কারি মমতার জয়যাত্রা ঠেকাতে পারেনি৷ এই অতীত থেকেই প্রশ্ন উঠছে ‘বিশ্ববাংলা’ বিতর্ক নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে হইচই হলেও তা দিয়ে কি নির্বাচনী ময়দানে ফায়দা তুলতে পারবেন মুকুল রায়? তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে পারবে ‘বিশ্ববাংলা’ বিতর্ক? আগামী দিনে মুকুল রায় কালীঘাটের অন্দরের আরও খবর প্রকাশ্যে আনতে পারেন কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি করা আর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এক নয়৷ রাজ্য রাজনীতির এই অঙ্ক মুকুল রায় অনেকের থেকে ভালো জানেন৷
এই রাজ্যে বাম জমানার আগে থেকেই সংগঠনের জোরে, নির্বাচনী মেশিনারির দাপটে ভোট হয়৷ যে বাহুবলী রাজনীতির সামনে বরাহনগরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন জ্যোতি বসু৷ যে মেশিনারির জোরে কেশপুরে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন নন্দরানী ডল৷ যে মেশিনারির দাপট বিধাননগর অথবা হালে দুর্গাপুর পুর নির্বাচনে দেখা গিয়েছে৷ মমতার জনপ্রিয়তার আড়ালে থেকে তৃণমূলের সংগঠন পুনর্গঠন করা আর বিজেপির সংগঠন পুনর্গঠন করা এক নয়৷ এই রাজ্যে ৭৭ হাজার বুথে এখনও বিজেপির সংগঠন তৈরি হয়নি৷ এই রাজ্যে রাষ্ট্রীয় স্বংয় সেবক সংঘের সংগঠন বাড়লেও নির্বাচনী ময়দানে বিজেপিকে সহয়তা দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার জায়গায় নেই সংঘ৷ এই সংগঠন তৈরি করতে হলে একদিকে তৃণমূল অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস থেকে মুকুল রায়কে দলে দলে লোক আনতে হবে৷ এই গণশিবির বদলের সম্ভবনা এখনও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তৃণমূল পরিষদীয় দলে মুকুল অনুগামী হিসেবে পরিচিতি থাকা দু-দশজন বিধায়ক থাকলেও তাঁরা শিবির বদল করবেন এমন ইঙ্গিত এখনও নেই৷ সংসদীয় দলেও ভাঙন ধরবে তার ইঙ্গিত এখনও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ এটা ঠিকই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে জেলায় জেলায় বহু মুকুল অনুগামী রয়েছে৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট বিতরণ করার ক্ষেত্রে মুকুলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কারণে পঞ্চায়েত স্তরে তাঁর অনুগামী অনেকে রয়েছেন৷ এই অনুগামীদের টানতে পারলে শাসক দলকে কিছুটা ধাক্কা দিতে পারবেন তিনি৷
তৃণমূলের দাপটে কোণঠাসা হয়ে থাকা বাম ও কংগ্রেস কর্মী এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট না পাওয়া অতৃপ্ত তৃণমূল কর্মী মুকুলের ভরসা হতে পারেন৷ বিশেষ করে ব্লকে ব্লকে গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত তৃণমূলের যাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট পাবেন না তাঁদের হয়তো বিজেপির প্রতীক দিয়ে দলে টানার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন মুকুল৷ তৃণমূলের হাতে মার খেয়ে, নেতৃত্বের কাছ থেকে সহায়তা না পেয়ে বসে যাওয়া বাম ও কংগ্রেস কর্মীদেরও মুকুল টানতে পারেন৷ প্রশ্ন হল, এই জোড়াতালি নিয়ে তৈরি সংগঠন কি তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে? এই সংগঠনের উপর কি মুরলীধর সেন লেনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে? এই প্রশ্ন এই কারণে প্রাসঙ্গিক শিবির বদলকারী এই ব্রিগেডের যারা নির্বাচনে জয়ী হবেন তাঁদের তৃণমূলে টেনে নেওয়ার জন্য সক্রিয় হবেন ঘাসফুলের বর্তমান ম্যানেজাররা৷ হালে পুর নির্বাচনের পর এই দলবদল দেখতে পাওয়া গিয়েছে৷ মুকুল যে অস্ত্র একদা বাম-কংগ্রেসকে বধ করার জন্য প্রয়োগ করেছিলেন সেই অস্ত্রের সামনেই তাঁকে পড়তে হবে৷ তখন নিজের দুর্গরক্ষা করা মুকুলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে৷ মুকুল নিজেই প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন, পুলিশ তাঁর ফোনে আড়ি পাতছে৷ এই অভিযোগের অর্থ দাঁড়ায় মুকুলের সঙ্গে কারা যোগাযোগ রাখছে তা শাসক দলের নখদর্পণে থাকছে৷ ফলে মমতার জনপ্রিয়তার ছাতার তলায় থেকে শাসক তৃণমূলের দু’নম্বর নেতা হয়ে নির্বাচনে বিধ্বস্ত বাম ও কংগ্রেস শিবির ভাঙন ধরানো আর রাজ্যে এখনও উদীয়মান শক্তি বিজেপির হয়ে দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূলের ঘর ভাঙানো এক নয়৷ মমতার ছায়ায় থেকে মুকুল তাঁর অতীতের সামস্ত ‘সাফল্য’ পেয়েছেন অনুকুল পরিস্থিতিতে এখন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে৷
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সিপিএমের সংগঠনে ধ্বস নামার অন্যতম কারণ তৃণমূলের বাহুবলী রাজনীতি৷ ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সিপিএমের নেতা ও কর্মীদের উপর তৃণমূলের আগ্রাসন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ঠেকাতে পারেনি৷ শয়ে শয়ে বাম কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ হাজার হাজার বাম কর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন৷ একদা কেশপুর-খানাকুলে সিপিএম যে মডেল অনুসরণ করেছে সারা রাজ্যে তৃণমূল সেই মডেল অনুসরণ করেছে৷ এই বদলার রাজনীতি কার্যত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কোমর ভেঙে দিয়েছে৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট নেতৃত্ব কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে না পারার কারণে বাম কর্মীদের একাংশ আত্মসমর্পণ করে শাসক শিবিরে চলে গিয়েছে, কিছু অংশ বিজেপিতে গিয়েছে, একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে গিয়েছে৷ গত ছয় বছরে তৃণমূলের যে আগ্রাসনের সামনে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে পড়তে হয়েছে তার পাশে বিজেপির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কোনও তুলনায় আসে না৷ পাড়ুই সহ বীরভূমের একাংশে বিজেপি মাথা তুলতেই সেখানে সংঘাত তীব্র হয়েছিল৷ যতদিন যাচ্ছে ততই রাজ্যের অন্যত্র এই সংঘাত বাড়ছে৷ মুকুল বিজেপিতে যোগদান করার পর সংঘাতের মাত্রাও বেড়েছে৷ আক্রান্ত হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ৷ ফলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মতো মুরলীধর সেন লেন তৃণমূলের বাহুবলী রাজনীতির সামনে পড়লে নিচুতলার নেতা ও কর্মীদের কতটা সুরক্ষা মুকুল সহ বিজেপি নেতৃত্ব দিতে পারবেন তার উপর নির্ভর করছে গেরুয়া শিবিরের অগ্রগতি৷ পাড়ুইতে বিজেপি কিছুদিন নিচুতলার কর্মীদের শেল্টার দিলেও তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ পাড়ুইতে সহায়তা দেওয়া আর রাজ্যজুড়ে সহায়তা প্রদান করা এক নয়৷ বাহুবলী রাজনীতি কোন কৌশলে মুকুল মোকাবিলা করেন তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্য রাজনীতি৷
কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিক ভাবে বাম নেতাদের তুলনায় কিছুটা অ্যাডভানটেজে রয়েছেন মুকুল৷ তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাত তীব্র হলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘনঘন রাজ্য সফর শুরু হবে৷ কেন্দ্রীয় টিমের আনাগোনা বাড়বে৷ বিজেপি নবান্নর উপর চাপ বাড়াতে চাইবে৷ এই কৌশল অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছেন৷ এই কৌশল নিচুতলায় বিজেপির নেতা ও কর্মীদের কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে তা সময় বলবে তবে আপাতদৃষ্টিতে কর্মিবাহিনীর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে এই কৌশল৷ মুকুলের অপর হাতিয়ার হতে পারে নারদা ও সারদা কেলেঙ্কারি৷ যদিও এই হাতিয়ার বিজেপির কাছে বুমেরাং হতে পারে৷ এই দুই কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের অন্য নেতাদের পাশাপাশি অভিযুক্ত হয়েছিলেন মুকুল রায়৷ সিবিআই তৃণমূল নেতাদের প্রতি সক্রিয় আর মুকুলের প্রতি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলে এক যাত্রায় কেন পৃথক ফল এই প্রশ্ন উঠবে৷ নরেন্দ্র মোদী সরকার সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন এই অভিযোগ আমজনতার পরিসের বিশ্বাসযোগ্য ভাবে নিয়ে যেতে পারবে তৃণমূল৷ ফলে নারদা-সারদা অস্ত্র বিজেপি কী ভাবে ব্যবহার করে তার দিকে সকলের নজর থাকবে৷ মুকুলকে বাঁচিয়ে সারদা-নারদা অস্ত্র বিজেপি কী ভাবে প্রয়োগ করবে তার উপর নির্ভর করছে এই অস্ত্র কতটা ডিভিডেন্ট দেবে৷ তবে নির্বাচনের ময়দানে যেহেতু এই দুই অস্ত্র নিয়ে নেমে বাম ও কংগ্রেস কোনও ফায়দা তুলতে না পারেনি তাই বিজেপি বর্তমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে৷
বিজেপি ‘সাম্প্রদায়িক’ নয় বলে মুকুল প্রকাশ্যে বললেও গেরুয়া শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে মুকুল নিজে কতটা খাপ খাওয়াতে পারেন তা উপর নির্ভর করছে পদ্মফুলে মুকুল নিজে কতটা বিকশিত হবেন৷ সারদা-নারদা কেলেঙ্কারির থেকে ধূলাগড় অথবা বসিরহাট-বাদুড়িয়ার ঘটনায় বিজেপি যে অনেক দ্রুত ডিভিডেন্ট তুলতে পারে তা ইতিমধ্যে রাজ্য রাজনীতি দেখেছে৷ দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা থেকে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ প্রমুখ নেতারা ধূলাগড় মডেলের রাজনীতি আগ্রাসী ঢঙে প্রয়োগ করতে চাইলে কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতি করে আসা মুকুলকে সেই রাজনীতির সঙ্গে খাপখাওয়াতে হবে৷ তৃণমূলে থাকার সময় থেকেই ফুরফরা সহ একাধিক জায়গার সংখ্যালঘু নেতৃত্বর সঙ্গে মুকুলের সুসম্পর্ক রয়েছে কিন্তু বিজেপিতে যাওয়ার পর সেই সম্পর্ক কতটা অটুট থাকবে তা লাখ টাকার প্রশ্ন৷ এক কথায় বিজেপি টিপিক্যাল হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা উচ্চগ্রামে নিয়ে গেলে মুকুল তাঁর সংখ্যালঘু বন্ধুদের হারাবেন৷ বিজেপিতে থাকতে গেলে মুকুলকে সংখ্যালঘু বন্ধুদের হারানোর ঝুঁকি নিতেই হবে৷ তৃণমূল ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার ঝুঁকি যখন মুকুল নিয়েছেন সেই দিন তিনি এই ঝুঁকিও নিয়েছেন৷ বিজেপির নিজস্ব হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে উঠতে পারলে মুকুলই হয়ে উঠবেন রাজ্য বিজেপির সর্বেসর্বা৷ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি বসে যাওয়া বাম-কংগ্রেস কর্মী ও অতৃপ্ত তৃণমূলীদের টেনে এনে কিছুটা সাফল্যও যদি মুকুল দেখাতে পারেন তা হলে রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই থাকবে৷ কিন্ত্ত রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা আর পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটানো এক নয়৷ রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের জায়গা পুরোপুরি আত্মসাত্ করে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে অনেক পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে রাজ্য বিজেপিতে এখনও কোনও পদ না পাওয়া মুকুল রায়কে৷
ডিসক্লেমার : সব ভাবনা লেখকের নিজের
 সৌজন্য- এই সময়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন