কেমন আছে ঝড়খালীতে বাঘের আক্রমনে নিহতদের পরিবার গুলি?

কেমন আছে ঝড়খালীতে বাঘের আক্রমনে নিহতদের পরিবার গুলি?  


প্রশান্ত সরকার, ঝড়খালী 


কথায় বলে ধরিবো মাছ খাইবো সুখে, আর এই সুখের ঘরে যদি আগুন লাগে সে আগুন আর নেভানো যায় না। সুন্দরবন আপনার আমার সকলের খুব প্রিয়। আর এই প্রিয় সুন্দরবন কারো কারো জীবনের কাল হয়ে দাঁরাই। এমননি এক পরিবারের কথা আপনাকে জানাবো। যে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার স্বজন হারানো বেদনায়।গীতা সরকার ঝড়খালী একেজি কলোনীর বাসিন্দা। গীতা দেবীর জীবনে নেমে এসেছে কালো ছায়া যে কালো ছায়া সরিয়ে আলো আশার আর কোনো রাস্তা নেই। গীতা দেবীরর স্বামী বিনয় সরকার (৪২) পেশায় মৎস্যজিবী ছিলেন। সুন্দরবনের নদী নালাতে মাছ কাঁকড়া ধরে কোনো রকম সংসারটা চালাতেন। পাঁচ মেয়ে, চার জনের বিয়ে দিয়েছেন  ছোটো মেয়ে অপর্না সরকার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। গত ১ আগষ্ট ২০১৭ দুই সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে এক সপ্তাহের রসদ গুছিয়ে বনবিবির নাম করে দেরিয়ে পরেছিলেন কাঁকড়া ধরতে। সঙ্গীদের মধ্যে একজন ছিলেন নিজের ভাই পরিমল সরকার ও আর একজন প্রতিবেশী তপন মণ্ডল।নদী জঙ্গলে কারো জীবনের কোনো সুরক্ষা নেই। কাঁকড়া ধরতে যাওয়া খুব বিপদজনক কারন ছোট ছোট খাঁড়ির মধ্যে ঢুকে পরতে হয় বেশী কাঁকড়া ধরতে। জীবনের  ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ঢুকে পরেন খাড়িঁর ভিতর। বিনয়রা ও ঝুকি নিয়ে ঢুকে পরেন দো-বাকীর খালে।  ৭ আগষ্ট কাঁকড়া ধরা শেষ।  এবার বাড়িতে ফেরার পালা। সবে সবে সকাল হল কিন্তু জোয়ার আসেনি জোয়ারের জলে পাল তুলে বেরিয়ে পড়বেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হল ওই খালের ভিতর। ততক্ষনে রান্না খাওয়া সেরে নিলেন। নৌকার মাঝি বিনয় তাই তার কথা মতন পরিচালিত হতে থাকে সব কিছু। জোয়ারের জলে নৌকা দোলা খেতে থাকে। নির্দেশ মতন পাল খাটিয়ে দাঁড় লাগিয়ে নৌকা এগিয়ে যেতে থাকে দো-বাকী খালের ভিতর দিয়ে।  দুপারে গভীর ঘণ জঙ্গল।  হঠাৎ জঙ্গলের ভিতর থেকে লাফ মেরে ঝাপিয়ে পরলো বাঘ মামা বিনয়ের গায়ে।  কথিত আছে জঙ্গলে গেলে বাঘকে মামা নামে পরিচয় দিতে হয়। বিনয়ের আতঙ্কিত চিৎকারে সঙ্গীরাও বুঝে যায় বিপদ ঘটেছে। বাঘ বিনয়ের কাধে থাবা ও গলায় কামড় বদিয়ে টেনে লাফিয়ে পড়ে নদীর জলে। সঙ্গীরা লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। একদিকে বনের রাজা নর খাদক পশু বাঘ অন্য দিকে দাদার জীবন বাঁচাতে ভাই। প্রায় দশ বারো মিনিট ধরে চলতে থাকে লড়াই। অবশেষে হার হল বনের রাজার। ভাই বাঁচানোর লড়াইয়ে জয়ী হলেও ভায়ের জীবন হারালো  পড়ে রইলো নিথর দাদার দেহ। নদীর জল লাল হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে জোয়ারের জলে সেটাও হারিয়ে গেল। চোখের জল হলো সঙ্গী। পরিমল দাদার মৃত দেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রহনা দিল।বিনয় খুব পরিশ্রমী  ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। গ্রামের সকলের সাথে তার খুব সুসম্পর্ক ছিল। কারো কোনো বিপদ ঘটলে বিনয় আগে হাজির হতেন। ছোট থেকে বড় সবাই বিনয় কে খুব ভালোবাসতো। মৃত দেহ নৌকাতে শুইয়ে নিয়ে বাড়ির কাছে ঘাটে পৌছলো। পাড়াতে খবর চলে গেল খবর গেল বারিতেও।  কান্নায় ভেঙে পরে গীতা দেবী ও নিকট আত্তিয়রা। গোটা গ্রামের মধ্যে নেমে আশে শোকের ছায়া। বিনয়ের কোনো ছেলে না থাকার জন্য ধর্মীয় নিয়ম মেনে ভাই পরিমলকে করতে দাহ করার কাজ ও নিয়ম বিধি।  বর্তমানে গীতা দেবী ও মেয়ে অপর্না সরকার খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বৈধ অনুমতি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে গেছিল বিনয়রা কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগীতার আশ্বাস পাওয়া যায়নি।সুন্দরবন যাকে দিয়েছে তাকে রাজা করে দিয়েছে আর যার থেকে নিয়েছে তাকে সর্ব শান্ত করে দিয়েছে।  এই দেওয়া নেওয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে  স্বজন হারাদের পাসে এগিয়ে এসেছে সুন্দরবন ভাবনা সেচ্ছাসেবী সংস্থা ঝড়খালী সবুজ বাহিনীর সদস্যরা। গীতা দেবীর মেয়ে অপর্না যাতে তার পড়াশুনো চালিয়ে যেতে পারে সেই আশ্বাস দিয়েছেন। এবং এই পরিবারটি যাহাতে আর্থিক সচ্ছলতায় ফিরে আসে সেই বিষয়ে সহযোগীতার হাত বাড়ানো আশ্বাস দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন