গঙ্গাসাগরে জন জোয়ার লক্ষ লক্ষ পূণ্যাথীদের পূণ্যস্নান

সুন্দরবন TV

গঙ্গাসাগরে জন জোয়ার লক্ষ লক্ষ পূণ্যাথীদের পূণ্যস্নান


কাকলী পাল|গঙ্গাসাগর|সাগর মেলা তার কৌলিন্য বজায় রাখল।সোমবার দক্ষিন ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের গঙ্গাসাগরে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীরা মকর সংক্রান্তির পূর্ণস্নান করলেন।আর পূর্ণস্নান চলবে সোমবার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টা ৪ মিনিট পর্যন্ত।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঙ্গাসাগরে সারা বছর ভিড় জমে পযটকদের।দেশের ২৩ টি রাজ্য এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পূণ্যার্থী থেকে শুরু করে পযটকদের আগমনে সাগরদ্বীপ এখন মিনি ভারত হয়ে উঠেছে।কনকনে ঠান্ডার মধ্যে মকর সংক্রান্তির পূণ্যস্নান শুরু হয়েছে।সাগরতটে রয়েছে নাগা সাধু থেকে শুরু করে সাধু সন্তরা।

দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীদের আগমনে মহামিলনের শ্রেষ্ঠ তীর্থ হয়ে উঠেছে গঙ্গাসাগর।যা কুম্ভমেলার পর ভারতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় মেলা গঙ্গাসাগর।এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জী বলেন এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রায়২৭ লক্ষের উপর পূণ্যার্থী পূণ্যস্নান করেছে। আর পূণ্যার্থী আসছে।আমি আশাবাদী এবার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষে পৌঁছে যাবে পূণ্যস্নানে।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।রাজ্যের এক গুচ্ছ মন্ত্রী,পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তারা মনিটারিং করছে।মেলায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নির্মল মেলা গড়ে তোলা হয়েছে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জী আরও বলেন এবছর ফায়ারের বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।কোন রকম কোন আগুনের দুর্ঘটনা ঘটেনি এখনও পর্যন্ত।মেলা চত্বরে হোগলের টোলগুলিতে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে যাতে আগুন না লাগে এবং আগুন লাগলে চটজলদি আগুন নেভানোর জন্য পযাপ্ত ফোম ও দমকল ইঞ্জিন রাখা হয়েছে।এদিন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্রোপাধ্যায়,মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস পূণ্যস্নান করে কপিলমুনি মন্দিরে পুজো দেয়।রাজ্যের যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঙ্গসাগর মেলায় যে কোন ধরনের দুর্ঘটনার মোকাবিলা জন্য সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।এই মেলা ভারতবর্ষের ঐতিহ্যতম মেলা।পূণ্যার্থীরা যাতে কোন রকমভাবে অসুবিধার মধ্যে না পরে তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে মেগা কট্রোল রুম।আর এই কট্রোল আছে ৮০০ টি সিসিটিভি,৫০ টি এলইডি স্কিন।আর এই কট্রোল রুমে ১২০ জন অফিসার ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করবে।এমনকি জলপথে জোয়ার ভাটা সময় কত পূণ্যার্থী আসছে তার সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে এই কট্রোল রুমের মাধ্যমে এবং ২০ টি বেলুন ক্যামেরা,২০ টি ড্রোন নজর রাখছে মেলা চত্বরে।

এমনকি পূণ্যার্থীদের সব কিছু বিষয়ে জানানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ৬০ টি এলইডি জয়েন্ট স্কিন ডিসপ্লের মাধ্যমে কচুবেড়িয়া, চেমাগুড়ি, নামখানায়।এর ফলে জানতে পারবে ভিড়ের মধ্যে কেউ হারিয়ে গেলে,জোয়ার ভাটা,ভেসেল চলাচল।মেলায় উপস্থিত আছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা,রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মনীষ গুপ্ত জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও,জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামিমা সেখ,সাগর কেন্দ্রের বিধায়ক বঙ্কিম চন্দ্র হাজরা, সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু প্রমুখ।
রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন গঙ্গাসাগর মেলায় এবছল বাঁশের ব্যারিকেডের বদলে লোহার ব্যারিকেড করা হয়েছে ২০ কিমি।মেলা চত্বরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ৪০ টি ইবার ও ৬০ টি হ্যান্ড রিক্সা,৪০০ টি টয়লেট স্বচ্ছতা রাখার জন্য।মেলার প্রথমদিন থেকেই শুরু হল ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা। জলপথে পূণ্যার্থীদের জন্য চলছে ৩০ টি ভেসেল,৫ টি বার্জ ও পর্যাপ্ত লঞ্চ।সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগর মেলা ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত পূণ্য কর্মকান্ডের মধ্যে অন্যতম পৌষ বা মকর সংক্রান্তির পূণ্যলগ্নে শুধুমাত্র ভারতবাসী নয়,সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রমণার্থীরা আসেন সাগর মেলায়।যা তৈরি হয় মহামিলনের শ্রেষ্ঠস্থান।এ পর্যন্ত প্রায় ২৭ লক্ষ পূণ্যার্থী পূণ্যস্নান করছে।এখনও বহু পূণ্যার্থী সাগরতটে ভিড় জমাচ্ছে।পূণ্যার্থীদের জন্য পানীয় জল,চিকিৎসা পরিষেবা,পরিবহণ,নিরাপত্তা, অগ্নি নির্বাপন সব রকমের পযাপ্ত পরিমানে সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। 'সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার' এই প্রচীন প্রবাদটি কপিলমুনির মাহাত্ম্যের জন্য সার্থক হয়ে ওঠে।সর্ব ধর্মের সমদ্ধয়ের দেশ ভারতবর্ষে ধম ভাবের শেষ নেই।তাইতো প্রতিবছর মকর-সংক্রান্তিতে মাঘের স্নানের এবং কপিলমুনি দর্শনের জন্য সাগরদ্বীপে আগমন ঘটে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী থেকে শুরু করে পযটক সাধারণ মানুষের।তবে গঙ্গাসাগর মেলার মূল আকর্ষণ কপিলমুনি।গঙ্গাসাগরের নেপন্যে পুরান কাহিনী ভাগবতে আছে কর্দম ঋষি দেবহতির পুত্র কপিল শিশুকাল থেকে অসাধারণ মেধা ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।কপিলমুনি পাতালে আশ্রম স্থাপন করে কঠোর তপস্যা শুরু করেন।সেই সময় চন্দ্র বংশীয় রাজা সগর সসাগরা বসুন্ধরার অধীশ্বর হওয়ার জন্য অশ্বমেধ যঞ্জ আয়োজন করেন।দেবরাজ ইন্দ্র এই খবর পেয়ে ভয় পেয়ে যান।তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েন,এবার বোধ হয় তার ইন্দ্রত্ব চলে যাবে।তাই তিনি যঞ্জ পন্ড করার জন্য যঞ্জের শ্যামবর্ণ অশ্বটি চুরি করে প্রথমে সাগরতটে বেঁধে রাখেন।পরে পাতালে কপিলমুনি আশ্রমে প্রবেশ করে।ধ্যানে বসে থাকা কপিলমুনি পিছনে ঘোড়াটি বেঁধে রেখে চলে যান।কপিলমুনি ধ্যান ভঙ্গ হয়।ক্রোধে চোখের আগুনে কপিলমুনি সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রকে পুড়িয়ে ফেলেন।পরে রাগ কমলে কপিলমুনি সগর রাজার সন্তান অংশুমানকে বলেন যাও স্বর্গ থেকে সুরধনীকে নিয়ে এসো।তার স্পর্শে সকল প্রাণ ফিরে পাবে।অংশুমানের পুত্র দিলীপ ব্যর্থ হন এই কাজে।শেষে দিলীপের পুত্র ভগীরথ কঠোর তপস্যা করে সফল হয়।রাজা ভগীরথ শাঁখ বাজিতে বাজাতে গঙ্গাদেবীকে পথ দেখিয়ে আনতে লাগলেন।গঙ্গার শুভ আগমন ঘটল বঙ্গদেশ এবং তার স্পর্শে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র প্রাণ ফিরে পেল।এই হল পঞ্চতীর্থের শ্রেষ্ঠ তীর্থ গঙ্গাসাগরের নেপথ্য পুরাণ কাহিনী।গত ৭ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটক।তবে এবছর গঙ্গাসাগর মেলা সম্পূর্ণভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখল।যা নজির গড়ল এক মহামানবের সাগরতীরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন