গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ১০ লক্ষ পূন্যার্থীদের ভিড়ে নব রুপে সেজে উঠেছে সাগরসঙ্গম

গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ১০ লক্ষ পূন্যার্থীদের ভিড়ে নব রুপে সেজে উঠেছে সাগরসঙ্গম


কাকলী পাল|গঙ্গাসাগর|দক্ষি ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ১০ লক্ষ পূন্যার্থীদের ভিড়ে সেজে উঠেছে নব রুপে সাগরসঙ্গম।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেগুরুত্বপূর্ণ ১০ টি দফতরের পদস্থ কর্তারা গঙ্গাসাগর মেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন।এদিকে জেলার অফিসার থেকে পুলিশের কর্তারা গঙ্গাসাগর মেলার ৫ কিমি এলাকা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘিরে রেখেছে।
কুম্ভমেলার পর ভারতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় মেলা গঙ্গাসাগর।গত ৭ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটক।অপরদিকে গঙ্গাসাগর মেলার আলোকসজ্জার শুভ উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জী।গঙ্গাসাগর মেলায় উপস্থিত আছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা,সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা,সাগর কেন্দ্রের বিধায়ক বঙ্কিম চন্দ্র হাজরা,জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামিমা সেখ,জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও,সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু,বিভিন্ন দফতের আধিকারিকগণ প্রমুখ।

মেলা চলবে ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত।তবে এ বছর পূর্ণ স্নান শুরু হচ্ছে ১৪ জানুয়ারি থেকে।আর মহেন্দ্র যোগে পূর্ণস্নান শুরু হচ্ছে ১৫ জানুয়ারি ভোর থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ৪ মিনিট পর্যন্ত।জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঙ্গাসাগর মেলার সব রকমভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।পূন্যার্থীদের ভিড়ে সাগরসঙ্গম তীরে তৈরি হচ্ছে মহামিলনের শেষ্ঠ তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর।এ পর্যন্ত সাগরসঙ্গমে ১০ লক্ষ পূন্যার্থীদের ভিড় পৌঁছে গেছে।মেলাকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে।পূণ্যার্থীরা যাতে কোন রকমভাবে অসুবিধার মধ্যে না পরে তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে মেগা কট্রোল রুম।আর এই কট্রোল আছে ৮০০ টি সিসিটিভি,৫০ টি এলইডি স্কিন।আর এই কট্রোল রুমে ১২০ জন অফিসার ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করবে।এমনকি জলপথে জোয়ার ভাটা সময় কত পূণ্যার্থী আসছে তার সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে এই কট্রোল রুমের মাধ্যমে।জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও আরও বলেন ২০ টি বেলুন ক্যামেরা,২০ টি ড্রোন নজর রাখছে মেলা চত্বরে।এমনকি পূণ্যার্থীদের সব কিছু বিষয়ে জানানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ৬০ টি এলইডি জয়েন্ট স্কিন ডিসপ্লের মাধ্যমে কচুবেড়িয়া, চেমাগুড়ি, নামখানায়।এর ফলে জানতে পারবে ভিড়ের মধ্যে কেউ হারিয়ে গেলে,জোয়ার ভাটা,ভেসেল চলাচল।জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন গঙ্গাসাগর মেলায় এবছল বাঁশের ব্যারিকেডের বদলে লোহার ব্যারিকেড করা হয়েছে ২০ কিমি।মেলা চত্বরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ৪০ টি ইবার ও ৬০ টি হ্যান্ড রিক্সা,৪০০ টি টয়লেট স্বচ্ছতা রাখার জন্য।মেলার প্রথমদিন থেকেই শুরু হল ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা। জলপথে পূণ্যার্থীদের জন্য চালু হয়েছে ৩০ টি ভেসেল,৫ টি বার্জ ও পর্যাপ্ত লঞ্চ।


সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগর মেলা ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত পূণ্য কর্মকান্ডের মধ্যে অন্যতম পৌষ বা মকর সংক্রান্তির পূণ্যলগ্নে শুধুমাত্র ভারতবাসী নয়,সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রমণার্থীরা আসেন সাগর মেলায়।যা তৈরি হয় মহামিলনের শ্রেষ্ঠস্থান।তীর্থশ্রেষ্ঠ গঙ্গাসাগরের জন্য সাগরদ্বীপ পৃথিবী বিখ্যাত।চারিদিকে জলবেষ্ঠীত সমুদ্র গর্ভ থেকে দ্বীপটির সৃষ্টি।এর চারিদিকে নদী আর সমুদ্রের কলকল্লোল শান্তির বাতাবরণ।এর মাটির নীচে জমে আছে কত সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিবৃত্ত।দ্বীপটির উপর ঘটেছে বহু সাম্রাজ্যের উত্থান পতন।আর এই পূর্ণ্য মাটিতে বসে মহর্ষি কপিল রচনা করেছেন সাংখ্যদর্শন।যুগ যুগ ধরে বহু সাধুসন্ত,সন্ন্যাসী, পূন্যার্থীর পদধূলি পড়েছে এই পবিত্র মাটিতে।নবদ্বীপ পঞ্জিকায় ৩০৯ টি মেলার উল্লেখ আছে।১৯২৯ সালে বাংলার তৎকালীন জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধিকর্তা ড.এ.বেন্টলি তার ফেয়ারস অ্যাপ ফেস্টিভ্যাল অব বেঙ্গল পুস্তিকায় ৮৪ টি মেলার উল্লেখ করেছিলেন।তাও মূলত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মেলা গুলিকে নিয়েই।সব ক্ষেত্রেই গঙ্গাসাগর মেলার উল্লেখ দেখা যায়।গঙ্গাদেবী শিবের জটাজাল থেকে মুক্ত হয়ে সাগরে এসে মিলিত হয়েছিলেন।তিনি মহাজ্ঞানী মহাতপস্বী কপিলদেব।সাংখ্যাবাদীরা বলেন ভগবান কপিল বিশ্বের আদি বিদ্যান, আদি উপদেষ্টা।তত্ত্বঞ্জান নিয়েই তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন।তার সাংখ্যাঞ্জান প্রাচীনতায় সর্বশ্রেষ্ঠ।তাই গঙ্গাসাগর সম্পর্কে একটি প্রবাদ আছে সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার।তবে রাজ্যে মা মাটি মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ও অনুপ্রেরণায় সাগরদ্বীপ জুড়ে উন্নয়নের কর্মযঞ্জ হয়েছে।ফলে শুধু পূন্যার্থী নয়,সারা বছর ধরে আসছে দেশ বিদেশের পযটকরা।এদিকে পূর্ণ্যস্নানের জন্য সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীরা মকর সংক্রান্তির টানেই কপিলমুনির সাগরপারে ভিড় জমাতে শুরু করেছে।যা তৈরি হয়েছে মিনি ভারতে মহামিলনের শ্রেষ্ঠস্থান গঙ্গাসাগর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন