সুন্দরবন TV
সাপে কামড়ানো রোগী নিজেই দূরে সরিয়ে দিলো কুসংস্কারকে
অকারণ মুখোপাধ্যায়
ক্যানিং- দীর্ঘ কয়েক দশকের পরিচয়।দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ক্যানিংয়ের তালদি গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবনগর গ্রামের দুর সম্পর্কের পাতানো ভাই আমির আলি সেখ। আচমকা ছুটি পেয়ে সোমবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ রেলকোয়ার্টারের বাসিন্দা মধ্য বয়ষ্কা মহিলা গোলাপী মল্লিক বেড়াতে এসেছিলেন পাতানো ভাই আমীর আলির গ্রামের বাড়ীতে।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ চা-মুড়ি খেতে খেতে গল্পগুজব করছিলেন দুই ভাইবোন।দীর্ঘদিন পর আলাপ হওয়ায় আমীর আলির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গল্পে মশগুল ছিলেন দিদি গোলাপী মল্লিকের সাথে।ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে বাড়ীর পাশেই পুকুর পাড়ে আচমকা বাড়ীর মেয়ে সেরিনার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সম্বিৎ ফেরে সকলের।চিৎকার শুনে রাতের অন্ধকারে পুকুর পাড়ে দৌড়ে গিয়ে জানতে পারেন,আমীর আলি বাবুর বছর আঠারোর মেয়ে সেরিনাকে বিষধর সাপে কামড় দিয়ে পালিয়েছে।
চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরাও দৌড়ে আসেন আমীর আলির বাড়ীতে।একে বারেই নাম জানাতে অনিছুক পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েকজন ওঝাগুনীণও চলে আসেন ঘটনাস্থলে।বাড়ীর সকলে তখন আতঙ্কের মধ্যে কি করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। প্রতিবেশীরা ওঝাগুনীণ কে দেখানোর কথা বলাবলি করতে থাকেন এবং সেই আলোচনার কথা গুনীণদের কানে পৌঁছালে তারা সাপে কামড়ানো সেরিনা কে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এবং কোন প্রকার বিপদ হবে না বলে ও আশ্বাসও দিতে থাকেন। এমনই কুসংস্কারের কথা শুনতে পেয়েই প্রতিবাদে সরব হন গোলাপী মল্লিক। তিনি তৎক্ষণাৎ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েন।অভিযোগ তখন বেশ কয়েক জন প্রতিবেশী এবং ওঝাগুণীন গোলাপী দেবী কে হুমকী দিয়ে বলতে থাকে “সেরিনা কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মেরে ফেলবে ওকে নিয়ে যাওয়া যাবেন”।এদিকে এমন বচসার জন্য সময় যত গড়িয়েছে রোগীর অবস্থাও জটিল পর্যায়ের দিকে অতিবাহিত হয়ে চলেছে।অবস্থা বেগতিক বুঝে গোলাপী মল্লিক এক প্রকার জোর করেই সেরিনা কে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হওয়ার চেষ্টা করলে কুসংস্কার আচ্ছন্ন মানুষজনেরা গোলাপী মল্লিকের পথ আটকে তাঁকে হুমকী দিয়ে বলে “অঘটন ঘটলেই দায়ভার নিতে হবে,মোটা অংঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি ইজ্জতও নষ্ট করা হবে।”
নিজের বাড়ীর কাছে এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ঘটনা এবং জনৈক মহিলাকে ইজ্জত নিয়ে কথা উঠলেও মেয়ের চিন্তায় বিমর্ষ হয়ে কোন প্রতিবাদ করার সাহস দেখান নি আমীর আলি।
অগত্যা নিরুপায় হয়ে নিজের মান সম্মান ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে প্রতিবাদে মূখর হয়ে ওঠেন গোলাপী।কারোর কোনও কথা কর্ণপাত না করেই সেরিনাকে নিয়ে রাত প্রায় নটার সময় সোজা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে হাজীর হন।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ ডাঃ সমরেন্দ্র রায়ের সাথে ঘটনার সমস্ত কথা বলেন। ঘটনার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যান চিকিৎসক সমর বাবু।তিনি রোগীর লক্ষণ দেখেই মুহূর্তে চিকিৎসা শুরু করেন। পর পর দেওয়া হয় ১০ এভিএস।মিনিট কুড়ি চিকিৎসা চলার পর সেরিনার অবস্থা সংঙ্কট জনক পর্যায়ে চলে গেলে তাকে আসিসিইউ তে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা।
রোগীর অবস্থা সংঙ্কট জনক হওয়ায় আতঙ্কে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন গোলাপী মল্লিক।
পরে অবশ্য চিকিৎসকরা গোলাপী দেবী কে অভয় আশ্বাস দিয়ে বলেন ভয়ের কিছুই নেই সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।
বিশিষ্ট সমাজসেবী মেহেদী হাসান সেখ,ফারুক আহমেদ সরদার,দীনবন্ধু ঘরামীরা বলেন “বর্তমান আধুনিক সমাজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিছু মানুষজন তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করে চলেছে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। তবে একজন মহিলা যে ভাবে নিজের মানসম্মানের চিন্তা না করে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে এক মহিলা জীবন বাঁচিয়েছেন তার কোন তুলনা হয় না”।
অন্যদিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ ডাঃ সমরেন্দ্র রায় প্রতিবাদী মহিলাকে প্রশংসা করে বলেন “রোগীকে হাসপাতালে আনতে আর মিনিট ত্রিশ দেরী হলে বাঁচানো সম্ভব হতো না। তবে গোলাপী দেবীর মতো সাধারণ একজন মহিলা নিজের ইজ্জতের কথা তুচ্ছ করে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মৃতপ্রায় মহিলাকে যেভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন তার কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।গোলাপী দেবীর মতো আরো হাজার হাজার প্রতিবাদী মহিলা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে,শিক্ষিত সভ্য সমাজ থেকে কুসংস্কারের বিলুপ্তী ঘটবে।”
গ্রামীণ চিকিৎসক কুমুদ ঘরামী বলেন “কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাধারণ একজন মহিলার প্রতিবাদ দেখে সাধারণ মানুষ যদি শিক্ষা নেয় তাহলে আগামী দিনে ওঝাগুণীন পালিয়ে যেতে বাধ্য“।
সেরিনা খাতুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠায় খুশি তার পরিবারে সদস্য সহ গোলাপী দেবী।
গোলাপী দেবী বলেন “কুসংস্কারের জন্য চোখের সামনে একজন মারা যাবে এটা মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেরিনা সুস্থ হয়ে ওঠায় সমাজের প্রতি নিজের কর্তব্য সঠিক ভাবে পালন করতে পেরেছি বলে মনে হয়”।
সাপে কামড়ানো রোগী নিজেই দূরে সরিয়ে দিলো কুসংস্কারকে
অকারণ মুখোপাধ্যায়
ক্যানিং- দীর্ঘ কয়েক দশকের পরিচয়।দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ক্যানিংয়ের তালদি গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবনগর গ্রামের দুর সম্পর্কের পাতানো ভাই আমির আলি সেখ। আচমকা ছুটি পেয়ে সোমবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ রেলকোয়ার্টারের বাসিন্দা মধ্য বয়ষ্কা মহিলা গোলাপী মল্লিক বেড়াতে এসেছিলেন পাতানো ভাই আমীর আলির গ্রামের বাড়ীতে।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ চা-মুড়ি খেতে খেতে গল্পগুজব করছিলেন দুই ভাইবোন।দীর্ঘদিন পর আলাপ হওয়ায় আমীর আলির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গল্পে মশগুল ছিলেন দিদি গোলাপী মল্লিকের সাথে।ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে বাড়ীর পাশেই পুকুর পাড়ে আচমকা বাড়ীর মেয়ে সেরিনার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সম্বিৎ ফেরে সকলের।চিৎকার শুনে রাতের অন্ধকারে পুকুর পাড়ে দৌড়ে গিয়ে জানতে পারেন,আমীর আলি বাবুর বছর আঠারোর মেয়ে সেরিনাকে বিষধর সাপে কামড় দিয়ে পালিয়েছে।
চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরাও দৌড়ে আসেন আমীর আলির বাড়ীতে।একে বারেই নাম জানাতে অনিছুক পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েকজন ওঝাগুনীণও চলে আসেন ঘটনাস্থলে।বাড়ীর সকলে তখন আতঙ্কের মধ্যে কি করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। প্রতিবেশীরা ওঝাগুনীণ কে দেখানোর কথা বলাবলি করতে থাকেন এবং সেই আলোচনার কথা গুনীণদের কানে পৌঁছালে তারা সাপে কামড়ানো সেরিনা কে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এবং কোন প্রকার বিপদ হবে না বলে ও আশ্বাসও দিতে থাকেন। এমনই কুসংস্কারের কথা শুনতে পেয়েই প্রতিবাদে সরব হন গোলাপী মল্লিক। তিনি তৎক্ষণাৎ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েন।অভিযোগ তখন বেশ কয়েক জন প্রতিবেশী এবং ওঝাগুণীন গোলাপী দেবী কে হুমকী দিয়ে বলতে থাকে “সেরিনা কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মেরে ফেলবে ওকে নিয়ে যাওয়া যাবেন”।এদিকে এমন বচসার জন্য সময় যত গড়িয়েছে রোগীর অবস্থাও জটিল পর্যায়ের দিকে অতিবাহিত হয়ে চলেছে।অবস্থা বেগতিক বুঝে গোলাপী মল্লিক এক প্রকার জোর করেই সেরিনা কে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হওয়ার চেষ্টা করলে কুসংস্কার আচ্ছন্ন মানুষজনেরা গোলাপী মল্লিকের পথ আটকে তাঁকে হুমকী দিয়ে বলে “অঘটন ঘটলেই দায়ভার নিতে হবে,মোটা অংঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি ইজ্জতও নষ্ট করা হবে।”
নিজের বাড়ীর কাছে এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ঘটনা এবং জনৈক মহিলাকে ইজ্জত নিয়ে কথা উঠলেও মেয়ের চিন্তায় বিমর্ষ হয়ে কোন প্রতিবাদ করার সাহস দেখান নি আমীর আলি।
অগত্যা নিরুপায় হয়ে নিজের মান সম্মান ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে প্রতিবাদে মূখর হয়ে ওঠেন গোলাপী।কারোর কোনও কথা কর্ণপাত না করেই সেরিনাকে নিয়ে রাত প্রায় নটার সময় সোজা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে হাজীর হন।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ ডাঃ সমরেন্দ্র রায়ের সাথে ঘটনার সমস্ত কথা বলেন। ঘটনার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যান চিকিৎসক সমর বাবু।তিনি রোগীর লক্ষণ দেখেই মুহূর্তে চিকিৎসা শুরু করেন। পর পর দেওয়া হয় ১০ এভিএস।মিনিট কুড়ি চিকিৎসা চলার পর সেরিনার অবস্থা সংঙ্কট জনক পর্যায়ে চলে গেলে তাকে আসিসিইউ তে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা।
রোগীর অবস্থা সংঙ্কট জনক হওয়ায় আতঙ্কে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন গোলাপী মল্লিক।
পরে অবশ্য চিকিৎসকরা গোলাপী দেবী কে অভয় আশ্বাস দিয়ে বলেন ভয়ের কিছুই নেই সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।
বিশিষ্ট সমাজসেবী মেহেদী হাসান সেখ,ফারুক আহমেদ সরদার,দীনবন্ধু ঘরামীরা বলেন “বর্তমান আধুনিক সমাজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিছু মানুষজন তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করে চলেছে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। তবে একজন মহিলা যে ভাবে নিজের মানসম্মানের চিন্তা না করে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে এক মহিলা জীবন বাঁচিয়েছেন তার কোন তুলনা হয় না”।
অন্যদিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ ডাঃ সমরেন্দ্র রায় প্রতিবাদী মহিলাকে প্রশংসা করে বলেন “রোগীকে হাসপাতালে আনতে আর মিনিট ত্রিশ দেরী হলে বাঁচানো সম্ভব হতো না। তবে গোলাপী দেবীর মতো সাধারণ একজন মহিলা নিজের ইজ্জতের কথা তুচ্ছ করে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মৃতপ্রায় মহিলাকে যেভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন তার কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।গোলাপী দেবীর মতো আরো হাজার হাজার প্রতিবাদী মহিলা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে,শিক্ষিত সভ্য সমাজ থেকে কুসংস্কারের বিলুপ্তী ঘটবে।”
গ্রামীণ চিকিৎসক কুমুদ ঘরামী বলেন “কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাধারণ একজন মহিলার প্রতিবাদ দেখে সাধারণ মানুষ যদি শিক্ষা নেয় তাহলে আগামী দিনে ওঝাগুণীন পালিয়ে যেতে বাধ্য“।
সেরিনা খাতুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠায় খুশি তার পরিবারে সদস্য সহ গোলাপী দেবী।
গোলাপী দেবী বলেন “কুসংস্কারের জন্য চোখের সামনে একজন মারা যাবে এটা মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেরিনা সুস্থ হয়ে ওঠায় সমাজের প্রতি নিজের কর্তব্য সঠিক ভাবে পালন করতে পেরেছি বলে মনে হয়”।