নুরসেলিম লস্কর,বাসন্তী : রাজ্য রাজনীতিতে এখন নয়া বিতর্কের নাম মিড ডে মিল। কখনো সামনে এসেছে ছাত্র ছাত্রীদের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার অভিযোগ তো আবার কখনো অভিযোগ উঠেছে শিশুদের খাবারের জন্য বরাদ্দ টাকার দুর্নীতির। সব মিলিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতিতে এই মিড ডে মিল বিতর্কে সরগরম ঠিক তখনই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ভাঙ্গনখালী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেল তার ভিন্ন ছবি। ছাত্র-ছাত্রীদের পাতে এদিন দেখা গেল মুরগির মাংসের বিরিয়ানি সঙ্গে স্যালাড । আর মিড ডে মিলে এদিন বিরিয়ানি পেয়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করে পেটপুরে খেতে দেখা গেল সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের। কিন্তু স্কুলের মিড ডে মিল মানেই তো সচরাচর ভাত ডাল কিংবা তরকারি। যদিও মিড ডে মিল নিয়ে একাধিক বিতর্কে রাজ্য সরগরম হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রত্যেক স্কুলের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। সেই খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাসে দশ দিন ডিম ও মাছ, একদিন ফল ও একদিন মাংস। কিন্তূ ভাঙ্গনখালীর ঐ স্কুলের খাদ্যতালিকায় আজ বিরিয়ানি কেন? সে বিষয়ে ঐ স্কুলের মিড ডে মিলের স্বাদ বদল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,এই অভিনব ভাবনার মূল কান্ডারি ঐ স্কুলের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম সরদার।তিনি নাকি প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে দিনে এরকম সব নানান রকমারি পদ রাখেন ছাত্র -ছাত্রী দের জন্য। আজ যেমন বিরিয়ানি তেমনি আবার কোন দিন থাকে পায়েস কিংবা চাটনি, মিষ্টি।আর এরাজের যখন প্রায়ই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে একের পর এক এই মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে দেখা যায় ছাত্র -ছাত্রীদের থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবক, অভিভাবিকাদের। কিন্তূ শিক্ষক জহুরুল ইসলামের সৌজন্যে এবাংলায় মিড ডে মিলের এক নতুন চিত্র দেখলো বাসন্তীর ভাঙ্গনখালীর এলাকার সাধারণ মানুষজন।
জহুরুল বাবুর এই নয়া কীর্তি সম্পর্কে এক অভিভাবক বলেন, ‘যে দিন থেকে জহুরুল স্যার আমাদের এই স্কুলে এসেছেন সেদিন থেকে শুধু মিড ডে মিল বলে নয় পড়াশোনারও যথেষ্ঠ উন্নতি হয়েছে। উনি অভিভাবকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্র ছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়ার ব্যাপারে তদারকি করেন। সেই সঙ্গে স্কুল ছুটির পর ওনাকে আমরা মাঝে মাঝে দেখি গ্রামের মধ্যে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে। স্যারের জন্য তো স্কুল ছেড়ে দেওয়া অনেক শিশু এখন স্কুলে আসে’।
আর স্কুলের মিড ডে মিলে বিরিয়ানি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক জহুরুল ইসলাম সরদার বলেন, “দেখুন যদি সদইচ্ছা থাকে তাহলে শুধু বিরিয়ানি নয় আরও অনেক কিছু করা যায়। আমি যখন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে এই স্কুলে আসি তখন এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল আড়াইশো থেকে তিনশো জন। আমি স্কুল ছুটির পর গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিভাবক দের বুঝিয়ে, ছাত্র ছাত্রী দের বুঝিয়ে স্কুল ছেড়ে দেওয়া প্রায় দেড়শো ছাত্র ছাত্রী কে আবার স্কুলমুখী করেছি। আমার কাছে এই বিরিয়ানির থেকে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি কাজ করতে ভালোবাসি। আমি স্কুলের উন্নতির জন্য বারবার প্রশাসন কে জানায়।এমন কি আমি এই স্কুলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেও একবার চিঠিও দিয়েছিলাম। আপনারা খোঁজ খবর নিলে তা জানতে পারবেন!শুধু তাই নয় এই কাজের জন্য অনেক সময় আমার উপর অনেক আক্রমণও হয়েছে কিন্তূ আমি পিছিয়ে যায়নি আর যাবও না এভাবে কাজ করে যাবো আমার সন্তানসম এই ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ‘।