রেল দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের ২ হাজার টাকার নোটে অর্থ সাহায্য তৃণমূলের!

 

নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গত শুক্রবারের সেই ভয়াবাবা রাত্রি কেড়ে নিয়েছে এ রাজ্যের ৬২টি তাজা প্রাণ। সেই সঙ্গে আহত হয়েছে সাড়ে তিনশো জনেরও বেশি মানুষ এবং নিখোঁজও রয়েছে কেউ কেউ। আর ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম রেল দুর্ঘটনার পর রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবার ও আও তাদের জন্য আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আর রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের পাশাপাশি এই স্বজনহারা দের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন। আর এই স্বজন হারানোদের সাহায্য করাকে কেন্দ্র করে এবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা। প্রসঙ্গত, এই মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার পর এরাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকংগ্রেস ঘোষণা করে যে, এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার কিছু দু লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। সেই মতো গত সোমবার রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা  সহ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা, বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মন্ডল, ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাসরা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসন্তী ব্লকের ছড়ানিখালি গ্রামের এক পরিবারের তিন ভাই সহ ছয়জনের বাড়িতে এবং ক্যানিংয়ের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখ সাগর গ্রামের নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তাদের হাতে ২ লক্ষ করে টাকা তুলে দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।

আর তার পর থেকে শুরু হয় বিতর্ক। স্বজনহারা ঐ শোকগ্রস্ত পরিবার গুলির হাতে যে ২লক্ষ্য করে টাকা দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ টাকার বান্ডিল টা ২ হাজার টাকার নোটের। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্বজনহারানো পরিবারে সদস্যদের হাতে সেই ২ হাজার টাকার নোটের বান্ডিলের একটা ভিডিও টুইট করে রীতিমতো কালো টাকা এভাবে সাদা করার অভিযোগ এনেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিনি সেই টুইটে লিখেছেন, “বর্তমানে ২ হাজার টাকার নোট বাজারে জোগান কম এবং তা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পরিবর্তন করার পদ্ধতি চলছে। এই পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবারগুলোকে ২০০০ টাকার নোট প্রদান করে তাদের সমস্যা কি বৃদ্ধি করা হলো না? দ্বিতীয়ত, এটা কালো টাকা সাদা করার তৃণমূলী পদ্ধতি নয় কি? এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য করছেন রাজ্যের একজন মন্ত্রী। সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এপ্রসঙ্গে এই প্রশ্নটাও রাখছি, একসাথে ২ হাজার টাকার নোটে ২ লক্ষ টাকার বান্ডিলের উৎস কি?

আর এই নোট প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা আরএসপি নেতা সুভাষ নস্কর তৃণমূল কে কটাক্ষ করে এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন,”রেল দুর্ঘটনায় বাসন্তীর পাঁচজন মৃত মানুষদের প্রত্যেক পরিবারের হাতে ২ হাজার টাকার নোটের বান্ডিলে ২ লক্ষ  টাকা তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হল। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। রাজ্যের মন্ত্রী বিধায়ক দলের মাধ্যমে খামে ভরা অর্থ গ্রহণ করে কান্নাভরা চোখে সদ্য পিতৃ বিয়োগে গলায় কাছা লাগানো শিশু সন্তানরা বেঁচে থাকার বাণী শুনেছিল। তারা জানে না এ নোটে কাজ হবেনা, ব্যাংকে গিয়ে কুড়ি হাজার কুড়ি হাজার করে পরিবর্তন করতে হবে। পিতৃ শ্রাদ্ধ বাদ দিয়ে পরপর ১০ দিন ব্যাংকেই ছুটতে হবে। তাছাড়া একই জন পরপর ১০ দিন গেলে হয়রানি হবে কিনা সন্দেহ।

মনে হয় দাতাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকার সংখ্যা কম ছিল, তাই চেক  এর মাধ্যমে না দিয়ে নগদ টাকা দিয়ে এদের উপকারের চেয়ে হয়রানি বেশি করলেন। অবুঝ শিশু ও তাদের মায়েরা এটা বুঝতে পেরে আরও কষ্ট পেলেন।এ প্রতারণার কি খুব দরকার ছিল?”।

 

আর বিজেপি সহ বিরোধীদের এই দাবি কে নস্যাৎ করে দিয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, ” সুকান্ত মজুমদার যে টুইট করেছেন তা অযৌক্তিক ভিত্তিহীন, ইঙ্গিতপূর্ণ এবং ব্যালখিললো সব কাজ কর্ম এই ২হাজার টাকার নোট কারা চালু করেছে? এই বিজেপি সরকার চালু করেছে । ২ হাজার টাকার নোট কি অবৈধ? না। দেশে তো এখনো বৈধ ঐ নোট। শুধু দেখতে হবে যে বা যারা দিচ্ছে তারা তাদের একাউন্সে দেখাচ্ছে কি না? আর যারা দিচ্ছে তারা কি বোকা? তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিচ্ছে। তাহলে সমস্যা কথায়?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন