ম্যানগ্রোভ নয়,পার্থেনিয়ামে ঢেকেছে সুন্দরবন

 

নুরসেলিম লস্কর, ক্যানিং : গাছের অপর নাম হল প্রাণ! কিন্তু সেই গাছের গায়ে এখন হাত দিলে হবে ক্যান্সার! হ্যাঁ, বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব। তাই সময় থাকতে নিজের সাবধান হয়ে যান এবং অন্যদেরকেও সাবধান করে দিন। নয়তো আগামী দিনে এই গাছের কারণেই গ্রামের পর গ্রাম,শহরের পর শহরে স্কিন ক্যান্সারের মহামারী শুরু হবে! আর এই অতিরিক্ত বিপজ্জনক গাছ কিন্তু বর্তমানে আমার আপনার বাড়ির আস-পাশেই জন্ম নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বর্তমানে রাস্তার আশপাশে এবং চাষের জমির ধারে ধারে ভর্তি হয়ে গিয়েছে এই বিষাক্ত গাছ। যার নাম পার্থেনিয়াম।


জানা যায়, এই গাছের জন্ম মেক্সিকোতে হলেও তা ধীরে ধীরে আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়া,আমেরিকার মতো দেশগুলিতে দেখা যেতে যেত, তা এখন এসে পৌঁছে গিয়েছে আমাদের দেশে। যা ইতিমধ্যেই এ দেশের সমস্ত রাজ্যের পাশাপাশি এরাজ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এমনকি এরাজ্যের প্রত্যন্ত সুন্দরবনেও এই পার্থেনিয়াম এখন প্রচুর পরিমাণে জন্মেছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিংয়ে এই ক্ষতিকারক গাছ এখন প্রতি পায়ে পায়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে অতি ব্যস্ততম ক্যানিং রেলস্টেশনের চারপাশ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দপ্তর ক্যানিং এসডিও অফিসের চারিপাশে, যেখান থেকে রোজ স্কুলের ছোট ছোট শিশুরা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ সুন্দরবন বাসি প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন। আর যাতায়াতের সময় কোনভাবে যদি এই বিষাক্ত আগাছার সংস্পর্শে কেউ আসেন তাহলে কিন্তূ তার অ্যালার্জিজনিত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কর্কট রোগ, কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে সে! এমন কি যদি ভুল করে ঐ আগাছা কে স্পর্শ করে কেউ তাহলে তার শরীরে ক্যান্সার দানা বাঁধার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ! আর মানুষ ও গবাদি পশুর মিউটেজেনিসিটির কারণ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে এই পার্থেনিয়ামকে। এই গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। একটি গাছ থেকে হতে পারে চার থেকে পঁচিশ হাজার বীজ। এই বীজ এতটাই ছোট যে খুব সহজেই বাতাসে মিশে যেতে পারে। পার্থেনিয়াম ফসলের উৎপাদনও প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। ১০ মিটার দূর থেকে পার্থেনিয়াম প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসন থেকে শহরাঞ্চলে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে পার্থেনিয়ামের বিষক্রিয়া কতটা? কি হতে পারে?তা স্লোগান, ব্যানার, ভিডিও বিভিন্ন সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রচারের চেষ্টা চলছে।

কিন্তূ দুর্ভাগ্যবশত হলেও এখনো পর্যন্ত সুন্দরবনের ক্যানিং,, বাসন্তী, গোসাবার মতো গ্রামাঞ্চল গুলিতে এখনো এই অতিবিষাক্ত পার্থেনিয়াম সম্পর্কে কোন প্রচার কিংবা কোনরকম সচেতনতা মূলক কোন কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায়নি। যেখানে গ্রামাঞ্চলে গুলিতে প্রচার ব্যাপকভাবে দরকার। আর যেখানে এই বিষাক্ত আগাছা কে নির্মূল করতে মাত্র পাঁচ লিটার জলে এক কেজি লবন মিশিয়ে গাছে স্প্রে করলেই পার্থেনিয়াম কে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়! সেখানে কেন এখনো স্থানীয় প্রশাসন ঘুমিয়ে রয়েছে? কে জানে? কবে ভাঙ্গবে তাদের ঘুম! তবে প্রশাসন ঘুমিয়ে থাকলেও ঘুমিয়ে নেই ক্যানিংয়ের বাসিন্দা, পেশায় স্কুল শিক্ষক গোপাল সা। তিনি রোজ নিয়ম করে এই বিষাক্ত আগাছা সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষ কে সচেতন করছেন।

সে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের কে ডেকে ডেকে বোঝাচ্ছেন পার্থেনিয়ামের ভয়াবহতা এবং পার্থেনিয়ামের করাল গ্রাসঃ থেকে মুক্তির পথও।আর এবিষয়ে শিক্ষক গোপাল সা অতি- উদ্বেগের সুরে বললেন, ” সম্পত্তি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই পার্থেনিয়ামের কারনে কিন্তু ৭০ শতাংশ মানুষের চর্মরোগ এবং ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে! এমনকি আমাদের ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ফলে এখনো পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে! তাই আমাদের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন অবিলম্বে এই অতিরিক্ত বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রশাসনের তরফ থেকে সচেতনমূলক প্রচার এবং পার্থেনিয়াম নির্মূল প্রক্রিয়াকরণ শুরু করা জন্য। নাহলে কিন্তূ আগামীদিনে আমাদেরকে অতি ভয়ংকর দিনের সাক্ষী থাকতে হতে পারে “।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন