সুন্দরবনে অনুষ্ঠিত হলো মহিলা মৎস্যজীবী সম্মেলন!

 

নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : শনিবার দঃ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তীর কুলতলীতে কেন্দ্রীয় অন্তস্থলীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থা সিফ্রির উদ্যোগে এবং কুলতলী মিলনতীর্থ সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় প্রায় তিন হাজার মহিলা মৎস্যজীবীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো মহিলা মৎস্যজীবী সম্মেলন। নদীমাতৃক ম্যানগ্রোভে ঘেরা সুন্দরবনে বসবাসকারী অধিকাংশ বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো মাছ চাষ! কিন্তূ প্রতিবছর কখনো আয়লা কখনো বুলবুল আবার কখনই বা ইয়াসের মতো প্রকৃতির বিপর্যয়ের করাল গ্রাসে পড়ে বার বার এই মাছ চাষ সহ সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকা সংকটে পড়েছে! তাই সুন্দরবনের দরিদ্র, বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের এই সমস্ত বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে কলকাতার ব্যারাকপুরের কেন্দ্রীয় অন্তস্থলীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থা (সিফ্রি) তার SCSP এবং STC কর্মসূচির অধীনে সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের জীবিকাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে এবং তাদেরকে প্রযুক্তিগত সকল প্রকার সহায়তা প্রদানমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার ফলস্বরূপ এদিন কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটির ক্যাম্পাসে সুন্দরবনের বাসন্তী, গোসাবার মতো পিছিয়ে পড়া ব্লকের অধীনস্থ ১৭ টি গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রায় ৫০টি গ্রামের তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ৫০০জন মহিলা মৎস্যজীবীদের হাতে মাছ চাষের বিভিন্ন সরঞ্জাম যেমন ১২কেজি করে মাছের চারাপোনা ,দু বস্তা মাছের খাবার এবং পুকুরের জল দূষণমুক্ত রাখতে চুনও তুলে দেওয়া হয়।

আর কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফ থেকে এমন সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে খুশি সুন্দরবনের মহিলা মৎস্যজীবীরা। যেমন, বাসন্তীর রামচন্দ্রখালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সুন্দরী মন্ডল নামের এক মহিলা মৎস্যজীবী বলেন, “আমাদের মতো সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকা এই মাছ, কাঁকড়ার উপরে নির্ভরশীল! কখনো নিজেদের পুকুরে মাছ চাষ করে সেই মাছ বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে তো কখনো আবার ডাঙ্গায় বাঘের সাথে লড়াই করে কিংবা জলে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে নদীথেকে মাছ, কাঁকড়া ধরে এনে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। আর আজকের সিফ্রি ও মিলনতীর্থ থেকে যে চারা মাছ, মাছের খাবার, চুন পেলাম আমরা তাতে আমরা খুবই উপকৃত হবো! কারণ এই মাছ নিজেদের পুকুরে চাষ করে সেই মাছ বিক্রি করে সেখান থেকে আমরা যে অর্থ পাবো তাতে আমাদের সংসার গুলি অনেকটা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে”। আর কুলতলীতে সিফ্রির এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিল্লী থেকে আগত ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের উপমহানির্দেশক ( মৎস্য বিজ্ঞান ), ডঃ জে. কে. জেনা, ড: বসন্ত কুমার দাস, নির্দেশক, সিফ্রি (ব্যারাকপুর), ড: প্রদীপ দে, নির্দেশক, আটারি(কোলকাতা) সহ কুলতলী মিলনতীর্থ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি তথা সুন্দরবনের বিশিষ্ট সমাজকর্মী লোকমান মোল্লা সহ আরো বিশিষ্টজনেরা।

আর এদিনের এই মৎস্যজীবি সম্মেলন সম্পর্কে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের উপমহনির্দেশক, ডঃ জে.কে. জেনা বলেন, “আমাদের সংস্থা সিফ্রি হলো একটি গবেষণা সংস্থা। আমাদের কাজ পুকুর, খাল, নদী নালা ও মাছ নিয়ে গবেষণা করা।কিন্তূ আমরা মাঝে মাঝে কিছু অর্থ পায় এবং তা দিয়ে আমরা আমাদের গবেষণা করা কাজ গুলিতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি! যেমন গত দশ বছর ধরে গোসাবা, হিঙ্গলগঞ্জ,কচুখালি, আমতলী, নামখানা সহ কাকদ্বীপের মতো এলাকাতে এরকম কাজ হয়ে আসছে “।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন