মোহনবাগান ফ্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে সুন্দরবনে মহিলা ফুটবলের জোয়ার!
নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : নদীর পাড়ে বাস, চিন্তা বারো মাস! হ্যাঁ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মানুষদের এটায় জীবন কথা! কারণ জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সুন্দরবনের বাসিন্দাদের। কিন্তূ গত রবিবার জুড়ে সুন্দরবনের অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ব্লক বাসন্তীর বাসিন্দারা সমস্ত চিন্তা, ভয় সব কিছু ভুলে মেতে উঠেছিল মহিলা ফুটবল উৎসবে।
চোরাডাকাতিয়া সুন্দরবন মোহনবাগান ফ্যান্স ক্লাব আয়োজিত সপ্তম বর্ষের তিনদিন ব্যাপী বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে এদিন তারা আয়োজন করেছিল এক নকআউট ফুটবল প্রতিযোগিতা। যেখানে এরাজ্যের বিভিন্ন জেলার মোট ৮ টি মহিলা ফুটবল দল অংশগ্রহণ করছিল। রবিবার এই ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইকবাল মোল্লা স্মৃতি একাদশ বনাম রাইহান আনিসুর সেভেন স্টার। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফলাফল গোল শুন্য থাকায় খেলা গড়াই ট্রাইব্রেকারে, সেখানে ৩-১ গোলের ব্যাবধানে চ্যাম্পিয়ন হয় রাইহান আনিসুর সেভেন স্টার। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে স্বর্গীয় মাখন চন্দ্র মন্ডল ও স্বর্গীয়া মাতঙ্গিনী মন্ডল স্মৃতি ট্রফি সহ নগত ১৫হাজার টাকা ও রানার্স দলের হাতে স্বর্গীয় অমিয় গিরি স্মৃতি ট্রফি সহ নগত ১২হাজার টাকা তুলে দেওয়ার। এছাড়াও এই ফুটবল প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় জয়ী দলের মধুমিতা মন্ডলের হাতে বর্তমান মোহনবাগান দলে খেলা তিন জন বিশ্বকাপার জেমি মাক্লারেন, জেসন কামিন্স ও দিমিত্রী পেত্রাতোস সহ বর্তমান ভারতীয় জাতীয় দলের নয়জন খেলোয়াড়ের স্বাক্ষর সম্মিলিত একটি ফুটবল সহ নানান পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় সেই সঙ্গে সেরা গোলকিপার, প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা কেও পুরস্কৃত করা হয়। আর সুন্দরবনের এই মহিলা ফুটবলের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে তথা প্রাক্তন অধিনায়ক শিল্টন পাল সহ প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য, মোহনবাগানের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক নিমাই গোস্বামী সহ দেশের প্রথম অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিক এবং শিক্ষা রন্ত প্রাপ্ত শিক্ষক অমল নায়েক, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক জহুরুল ইসলাম সহ আরো বিশিষ্টজনেরা।
আর এই তিনদিন ব্যাপী বাৎসরিক অনুষ্ঠান সম্পর্কে চোরাডাকাতিয়া সুন্দরবন মোহনবাগান ফ্যান্স ক্লাবের সভাপতি সাবির হোসেন সেখ ও ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, "আমাদের ক্লাবের বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান আর পাঁচটা ক্লাবের বাৎসরিক অনুষ্ঠানের মতো নয় আমাদের ক্লাবের বাৎসরিক অনুষ্ঠালের মূল লক্ষ্য হলো আমাদের প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষদের, ছেলে মেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা।তাই আমরা আমাদের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে রিফিউজি হ্যান্ডিক্যাফসের সহযোগিতায় সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের ১হাজার মানুষের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিয়েছি, একশোটি ক্লাবের প্রতিনিধিদের হাতে ভলি বল তুলে দিয়েছি এবং এই ফুটবল প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে আমাদের সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দীপাঞ্চলের প্রতিভাববান মহিলা ফুটবলারা ফুটবল পায়ে যাতে রাজ্য তথা দেশের মাঠ কাঁপাতে পারে এবং সম্মান ছিনিয়ে আনতে পারে সেই সব প্রতিভা গ্রাম থেকে তুলে আনার জন্য আমরা বাসন্তীর চোরাডাকাতিয় মোহনবাগান ফ্যানস্ ক্লাব সব সময় অঙ্গীকার বদ্ধ"।