বাসন্তীতে শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী টুসু মেলা

বাসন্তীতে শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী টুসু মেলা 


নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তীর বাড়িয়াতে শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী 'চুনাখালি অঞ্চল সুন্দরবন বিরসা মুন্ডা ও আদিবাসী টুসু মেলা। ঝুমুর নৃত্য, কাঠি নৃত্য সহ ছৌ শিল্পীদের নিয়ে এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে ৩০তম বর্ষের এই মেলার শুভ সূচনা করেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিক তথা সুন্দরবনের বিশিষ্ট সমাজসেবী বাপ্পাদিত্য নস্কর। আদিবাসীদের মতে টুসু লৌকিক দেবী। তাঁকে কুমারী হিসাবে কল্পনা করে পুজো করা হয়। সেই কারণেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা মূলত কুমারী তাঁরাই মূলত টুসু উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। যদিও টুসু উৎসব বর্তমানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই এই টুসু মেলাকে কেন্দ্র করে সাজো সাজো রব বাসন্তীর বড়িয়া সহ সমগ্র চুনাখালি অঞ্চল ।আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ধামসা-মাদল। যেকোনও পরবে মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে ধামসা-মাদলের ছন্দে মেতে ওঠেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। ঝুমুর গান, টুসু গানের সঙ্গে ধামসা-মাদলের ছন্দ দোলা লাগায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের মনেও। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদেরে ঐতিহ্যবহী ঝুমুর নাচের মাধ্যমে মহাসমারহে পালিত হতে দেখা গেল এই টুসু মেলা। ১৭ জানুয়ারি থেকে আরম্ভ হওয়া এই উৎসব চলবে ২২ জানুয়ারী পর্যন্ত। শুধু স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারাই নন, এই মেলায় অংশগ্রহণ করছেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের বহু মানুষও ।আর এদিনের এই মেলার উদ্বোধনের আগেই প্রথমে ভগবান বিরসা মুন্ডা ও বাসন্তী, গোসাবার উন্নয়নের কান্ডারি তথা এই মেলার প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থিত অতিথি গন। যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দঃ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রী বিশাল সহ পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও ক্যালচারাল বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি বিরসা তিরকে, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী আব্দুল মান্নান গাজী, বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রিয়াঙ্কা মন্ডল, সহকারী সভাপতি আতিয়ার রহমান মোল্লা, বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহন কর্মাধ্যক্ষ নুর ইলাহী গাজী, নারী শিশু ও জনকল্যাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শিখা সরদার, চুনাখালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিপালী বৈরাগী সরদার,উপ প্রধান নরেশ চন্দ্র নস্কর, শিক্ষক ও সমাজসেবী তপু মাহাতো,বিশিষ্ট সমাজসেবী কালিপদ সাউ, কৃষ্ণ চন্দ্র মাহাতো, বলাই চন্দ্র মাহাতো, হৃদয় ঘরামী, বিশিষ্ট সমাজসেবী দেবাশীষ বৈরাগী সহ চুনাখালী গ্রাম পঞ্চায়েতের সকল সদস্য সদস্যা। 
 

              
এই মেলার মঞ্চ থেকে এদিন বিরসা মুন্ডার জীবনী ও আদর্শ নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও ক্যালচারাল বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি বিরসা তিরকে। সেই সঙ্গে মেলার প্রতিষ্ঠাতা তথা বাসন্তী গোসাবার রূপকার স্বর্গীয় বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের আদর্শ ও আদিবাসী সমাজের প্রতি তার অবদানের কথা সারা জীবন মনে রাখার জন্য এবং এই মেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বড়িয়ার মানুষ তথা মেলা কমিটির সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী আব্দুল মান্নান গাজী। আর নিলীমা মিস্ত্রী বিশাল বলেন,'তাঁর জন্য বড়িয়ার এই উন্নয়ন। ২০১১ সালের পর থেকে এই এলাকার উন্নয়নের ধারাকে তরান্বিত করে ছিলেন জয়ন্ত বাবু, এই এলাকার শিক্ষা বিস্তারে জুনিয়র হাইস্কুল থেকে হাইস্কুল নির্মান সহ মডেল স্কুল নির্মাণ করে দিয়ে ছিলেন তিনি। যেখানে আশেপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল ছাড়াও ক্যানিং থেকে অনেক ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা করছে।আরো উন্নয়ন বাকি আছে। আমরা সবাই চেষ্টা করবো এক কালের অনুন্নত গ্রাম বড়িয়াকে এই মেলার মাধ্যমে এই এলাকার সাধারণ মানুষের দাবী উঠবে। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে। ইতিপূর্বে রাস্তা ঘাট টিউবওয়েল থেকে অনেক কাজ করা হয়েছে।   এদিনের মঞ্চ থেকে বড়িয়া হাইস্কুল প্রাঙ্গনে একটি মুক্ত মঞ্চ করে দেওয়ার দাবি উঠেছে। মেলা কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ মাঝি ও সম্পাদক দিবাকর সরদার জানিয়েছেন,আগামী ২২ শে জানুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলবে, প্রতি দিন আদিবাসী কৃষ্টি কালচার বিষয়ে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সে বিষয়ে স্বনির্ভর দলের মহিলাদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে রকমারি দোকান,ফুড স্টল,সহ দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক নিমাই মালি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন