পান্তাভাত ও নববর্ষের সম্পর্ক
প্রশান্ত সরকার | বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে এক গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী দিন। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পোশাক-আশাক, গান-বাজনার পাশাপাশি খাদ্যসংস্কৃতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পান্তাভাত খাওয়ার রীতি।পান্তাভাত হলো সেদ্ধ ভাতকে জল দিয়ে ভিজিয়ে রেখে পরদিন খাওয়া একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। এটি সাধারণত কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, লবণ এবং ইলিশ মাছের সঙ্গে পরিবেশিত হয়। পয়লা বৈশাখের সকালে অনেক বাঙালি পরিবারে এই পান্তাভাত খাওয়া একটি প্রচলিত রীতি।এই রীতির পেছনে রয়েছে একাধিক সামাজিক ও পরিবেশগত কারণ। বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড গরম পড়ে। পান্তাভাত শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং এটি সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। কৃষিনির্ভর সমাজে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার, যা বছরের শুরুতে কৃষকদের কষ্ট ও মাটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।এছাড়া, পান্তাভাত খাওয়া মানে মাটির স্বাদ গ্রহণ করে নতুন বছর শুরু করা—যা একপ্রকার আধ্যাত্মিক ও আত্মিক উপলব্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এতে জীবনে সরলতা, স্থিরতা ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।বর্তমানে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতেও এই ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। অনেকেই গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বা শিকড়ে ফিরে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে পান্তাভাত খাওয়াকে গ্রহণ করছেন।নববর্ষের সঙ্গে পান্তাভাতের সম্পর্ক শুধু খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে গভীর এক সংযোগের বহিঃপ্রকাশ।